জুয়ারী ৩
পথিক পরদেশী
খালেদ আহমেদ, সাধারন চাকুরীজীবী। জুয়া খেলায় তার কোন আগ্রহই নেই। তবে, হঠাৎই টাকার সমস্যাতে পরে গিয়েছিলো সে। হঠাৎই চাকুরীটা চলে গিয়েছিলো তার। ভাড়া করা বাসায় থাকে বলে, বন্ধক দেবার মতো কোন সম্পদই তার ছিলো না। শাহেনশাহ এর জুয়ায় জিতে যদি, নগদ এক কোটি টাকা পেয়েই যায়, মন্দ কি?
খালেদ আহমেদের তিন ছেলে মেয়ে। ফাহমিদা কলেজে পড়ে। বাকী দুটো তখনো ছোট। বউটাও খুব ভালো এবং সুন্দরীও বটে। তাই বলে নিজ বউকে বাজী করে এক কোটি টাকা জিতে নেবার মন তার ছিলো না। আর, নিজ মেয়ে ফাহমিদার কথা তো ভাবতেই পারে না।
খালেদের বিষন্ন দিনগুলো পার্কে বসেই কাটতো। সকালে আফিসে যাবার নাম করে, ঘর থেকে বেড়োতো ঠিকই, তবে সারাট দিন পার্কে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতো। ফাহমিদারও কলেজে কিছু সমস্যা হয়েছিলো। সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা গুলো বিচিত্র কিছু নয়। একাধিক ছেলেদের প্রেমের জালে আটকে, শেষ পর্য্যন্ত নিজেই টিটকারীর বস্তুতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। কলেজে গেলেই, এটা সেটা বাজে টিটকারীই শুনতে হতো। তাই ফাহমিদাও কলেজে যাতায়াত করাটা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তবে, সেও সকালে কলেজে যাবার নাম করেই ঘর থেকে বেড়োতো। সারাটা দিন এখানে সেখানে পার্কে সময় কাটিয়ে, দুপুরের কিছু পরেই ঘরে ফিরতো।
সেদিনের ঘটনাটা কাকতালীয়ই ছিলো। খালেদ আহমেদ যেমনি পার্কে বসে সময় কাটানোর কথা ভাবছিলো, একই পার্কে ফাহমিদাও সময়টা কাটিয়ে নেবার জন্য ঢুকেছিলো। হঠাৎই দুজনে সামনাসামনি হয়ে পরাতে, পালানোর যেমনি কোন পথ ছিলো না, ঠিক তেমনি এড়িয়ে যাবার মতো ফুরসৎও ছিলো না। উভয়েই অবাক হয়ে বলেছিলো, তুমি এখানে কেনো?
ফাহমিদা মন খারাপ করেই বলেছিলো, কলেজে সবাই টিটকারী করে, তাই কলেজে যেতে ইচ্ছে করে না।
খালেদ আহমেদ রাগ করেই বলেছিলো, টিটকারী করে বলে, কলেজে যাবে না, এটা কোন কথা হলো? তাই বলে কলেজ ফাঁকি দেবে? জলদি কলেজে যাও!
ফাহমিদাও মন খারাপ করে বললো, আমি না হয় কলেজে গেলাম, তুমি অফিসে না গিয়ে, এখানে কি করছো?
খালেদ তৎক্ষনাত কিছুই বলতে পারলো না। আমতা আমতা করতে থাকলো শুধু। এক পর্যায়ে ফাহমিদাকে কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতি করিয়েই বললো, আসলে আমার চাকুরীটা চলে গেছে। নুতন কোন চাকুরীও পাচ্ছি না। সংসার চালানোর জন্যে, এর তার কাছে অনেক টাকাও ধার করে ফেলেছি। কি যে করি!
ফাহমিদার সাথে সেদিনই সখ্যতাটা হয়ে গিয়েছিলো খালেদের। ফাহমিদা নিজে থেকেই বললো, শাহেনশাহ এর তো অনেক নাম ডাক! এক বার বাজীতে নেমেই দেখো না।
খালেদ অবাক হয়েই বললো, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? শাহেনশাহ এর বাজীর ধরন জানো?
ফাহমিদা শান্ত গলাতেই বললো, জানি! কিন্তু, দেনার দায়ে তো আমাদেরকে পথে বসাতে চাইছো! তা ছাড়া, কলেজে সবাই এমনিতেই বাজে মেয়ে বলে ডাকে!
খালেদ বললো, দরকার হলে, গায়ের রক্ত বিক্রী করে করে, তোমাদের ভরন পোষন করবো। তারপরও ওসব মুখে আনবে না।
ফাহমিদা বললো, রক্ত বেঁচে আর কয়দিন খাওয়াবে? গায়ে রক্ত বানাতেও টাকা পয়সা লাগবে, নাকি? তা ছাড়া জুয়াতে যদি জিতেই যাও, তাহলে তো সে টাকা দিয়ে, ছোট খাট একটা ব্যবসা হলেও করতে পারবে!
খালেদ আহমেদের মনটাও তখন বদলে গিয়েছিলো।
(চলবে)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment