27 January 2012 - 0 comments

অঞ্জলী দি (সপ্তম পর্ব)

রাতে খাবার টেবিলে সবাই অনেকদিন পর একত্র হলো। পরিবারের সকল লোকজন। শুধু পিসিমা নেই। আর নেই অঞ্জলী। তবে এখানে যা কিছু ঘটছে তার রানিং কমেন্ট্রি পাচ্ছে অঞ্জলী বন্যার কাছ থেকে। রোহিত এখন পরিবার প্রধান। বয়সের তুলনায় একটু বেশী বুড়িয়ে গেছে। তাকে বেশ চিন্তিত আর বিমর্ষ দেখাচ্ছে। মনি শংকর বেশ একটু গম্ভীর। বাদবাকী সবাই খুব হ্যাপী মুডে আছে। কথার খই ফুটছে বন্যার মূখে। অমিত হাসিখুশী।

আগের মতই কম কথা বলা মানুষ। পরিবারের সান্নিধ্য উপভোগ করছে। বড় বৌদি নিজের হাতে অনেকগুলি আইটেম করেছেন। আহ কি অপূর্ব স্বাদ! টেবিলের এক মাথায় অমিত। তার দুপাশে রোহিত আর মনি শংকর। মনি শংকরের পাশে বিন্দু আর রোহিতের পাশে বন্যা। মঞ্জু বসেনি। সে খাবার তদারক করছে। হরবর করার মাঝখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু সামনে নিয়ে এল বন্যা।

“আচ্ছা বাবা, তোমরা এমন হাড় কেপ্পন কেন গো? আমার ছেলেটা যে এত বড় হলো তার বিয়ে থা দেবার নাম করছো না?” দেখার পর থেকেই বন্যা ঘোষণা দিয়েছে অমিত তার ছেলে।

“বেশ তো ছেলেকে কাছে পেয়েছ এখন থেকে তুমিই না হয় যোগাড় যন্ত্র করো?” রোহিত হেসে জবাব দেয়।

“সেই ভাল। আমি আর ছোট মা মিলে এক মাসের মাঝে আমার ছেলের বিয়ে দেব।” বন্যা বিন্দুকে ছোট মা বলে ডাকে। বিন্দুর সন্তানাদি নেই। বন্যাকে সে সন্তানের মত স্নেহ করে। আর বন্যা তো মার চেয়ে ছোট মাকেই বেশী জানে। এখন আলাদা আলাদা ফ্লাট হয়ে যাওয়ায় ছোট মাকে ভীষন মিস করে বন্যা।

রোহিত বার দুই গলা খাকারী দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। তার পর বললো, “অমিত, আমরা আমাদের সহায়-সম্পদ ভাগ করে নিয়েছি। বলা যায় ঠাকুরমা নিজের হাতে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। তোর ভাগে আছে রায় ইলেক্ট্রনিক্স আর রায় টেক্সটাইল মিলস। তোর দেয়া পাওয়ার অব এটর্নীতে আমি এ গুলি চালাচ্ছি। আমি চাই তুই তোর সম্পদ বুঝে নে।”

“বড়দা এসব মিল ফ্যাক্টরীতে আমি আগেও ছিলাম না এখনও নেই। কদিনের জন্য বেড়াতে এসেছি আমার মত থাকতে দে।” অমিত নিস্পৃহ। রুই মাছের মুড়োটা মনি শংকরের পাতে তুলে দিল অমিত।

“না না বড়দা ঠিকই বলেছে,” মনি শংকর প্রতিবাদ করে, “তুই তোর কোম্পানী বুঝে নে। বড় দার বয়স হয়েছে। আমি যতটুকু জানি কোম্পানীগুলির পজিশন তেমন ভাল না।” মাছের কাঁটা বেছে অমিতের পাতে দেয় মনি শংকর। খুব ছোট বেলা থেকেই অমিত কে মাছের কাটা বেছে দেয় সে।

“হ্যা অমিত, আমি নানান দিকে মন দিতে গিয়ে ব্যবসটা ভাল চালাতে পারছি না। তুই এবার একটু দেখ ভাই।” রোহিত আবারও বলে।

“তোমরা কি শান্তিমত ছেলেটাকে খেতে দেবে না ব্যবসা করবে?’ এবারে বেশ তেতে উঠে মঞ্জু।

ডিনারের পর মনি শংকর আর বিন্দু চলে যায়। ঠিক হয় রাতে স্পেশাল গেস্ট রুমে থাকবে অমিত। যাবার আগে মেজ বৌদি অমিতের ঘরে ঢুকে। অমিত আধশোয়া হয়ে ছিল। বিন্দুকে দেখে সোজা হয়ে বসে। বিন্দু বিছানাতেই বসে অমিতের পাশে।

“তা রাজা বাবুর কি বিয়ে থা করার ইচ্ছে আছে না লিভিং টুগেদার করেই জীবন কাটিয়ে দেবে?”

“কি সব যা তা বলছ বৌদি?” অমিতের ফর্সা চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

“যা তা হলে তো ভালই। আমরা নিশ্চিন্তে কনে খুজতে পারি। তা কেমন বৌ চাই রাজা বাবু?”

অমিত বুঝলো বৌদিকে কাটাতে না পারলে তার কপালে খারাবী আছে। তাই পাল্টা আক্রমনের কৌশল করে বললো, “তোমার মত।”

মূহুর্তে চোখ কপালে উঠে গেল বিন্দুর। অমিতের পিছনের আয়নায় সে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে। কত হবে বয়স? অমিতের চে সামান্য ছোট হবারই সম্ভাবনা। ফর্সা সুন্দর আটোসাটো শরীর। বাচ্ছা কাচ্ছা হয়নি বলে এখনও কুমারী মেয়েদের আদল যায়নি। যে কোন পুরুষ তাকে দেখলে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য।

“আমার মতো?”

“হ্যা তোমার মত”

“আমার মত পেত্নী বিয়ে করবে কেন তুমি? তোমার জন্য আমি রাজ কুমারী খুজেঁ আনবো।”

“তার মানে আমাকে কুর্নিশ করতে করতে ঘরে ঢুকতে হবে।”

“জ্বী না তোমাকেই কুর্নিশ করবে। মেয়েদের কুর্নিশ করাতে জানতে হয়।” বিন্দু অমিতের নাক টিপে দিল।

“এসব আমি কেমন করে জানবো?”

“সময় আসুক, না হয় আমিই শিখিয়ে দেব? এবার ঘুমাও।”

অমিতের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিল বিন্দু। এগিয়ে এসে চুমো খেল কপালে। তার পর চলে গেল। খুব সাবলীল। কোন পাপ, কোন জড়তা বা কামনা চোখে পড়লো না।

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অমিত। তার ঘুম আসছে না। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল সে দেশে আছে। এত কাছে তবু অঞ্জলীর সাথে দেখা হচ্ছে না। জীবনটা এত জটিল কেন? অমিত কিছুতেই অঞ্জলীকে চোখ থেকে সরাতে পারছে না।

হঠাত করেই মোবাইল বাজলো। ম্যাগীর ফোন। “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে ম্যাগীর চাপা গলা শুনা গেল। “যে খানেই থাকো রাতে সাবধানে থেকো। আমি আততায়ী আশংকা করছি।” লাইন কেটে গেল।

এ ধরণের ফোনের ক্ষেত্রে কল ব্যাক করতে মানা আছে। হয়তো কেউ ওয়াচ করছে। সামান্য সুযোগে কথা বলেছে ম্যাগী। মেয়েটার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ। ম্যাগী সতর্ক করার মানে হল সতর্ক হতে হবে। অমিত আত্ম প্রকাশ করার আগেই মনি শংকরের কাছে পৌছে গেছে। কল লিস্ট থেকে ম্যাগীর নামটা মুছে দিয়ে বিছানার উপর উঠে বসলো অমিত। না আসা ঘুম আরো দূরে চলে গেল। ঘরের সব লাইট অফ করে দিলো। কোল বালিশটাকে বিছানায় রাখলো একদম মানুষের মত করে। চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল অমিত। টোকা দিল বন্যার দরজায়।

কোন প্রশ্ন না করেই বন্যা দরজা খুললো। তার ধারণা ছিল মা এসেছে। কিন্তু দরজায় অমিতকে দেখে চমকে উঠলো। “ছোট কাকু তুমি?”
“হ্যা রে মা ঘুম আসছে না।”
“এস এস ভিতরে এস।”
ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল অমিত। রুমটা যে এত বড় তা বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই। খাট, পড়ার টেবিল, মিউজিক সিস্টেম, কম্পিউটার সিস্টেম, টেলিভিশন, জিম এ্যাপারেটাস, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট কি নেই? একদম স্বয়ং সম্পূর্ণ একটা রুম।

ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো অমিত। মাথাটা হেলান দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকলো চোখ বন্ধ করে। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
“ছোট কাকু তোমার কি শরীর খারাপ?”
“না, আসলে কেন জানিনা ঘুম আসছে না। একা একা বোর ফিল করছিলাম।”
“ভালই হল। আমি আরও ভাবছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। নইলে আমিই যেতাম।”
“কেন রে?”
“তোমার আমেরিকার গল্প শুনবো বলে।”
“ঠিক আছে বলবো”
“জান ছোট কাকু, আমাদের পুরনো বাড়িটা না এখন অনাথ আশ্রম হয়েছে। আমার মাসিমনি সেটা চালায়। মাসিমনিকে চেন তুমি?”
“এখন মনে করতে পারছি না, তবে নিশ্চই চিনি।”
“খুব সুন্দর। এই দেখ তার ছবি।”
হাত বাড়িয়ে পড়ার টেবিল থেকে একটা ফ্রেমে বাধানো ছবি আনে বন্যা। স্টিল ছবি। দু্*ই পাশে অঞ্জলী আর মঞ্জূ মাঝখানে বন্যা। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমূখে। সদ্য তোলা ছবি।
অমিত তাকিয়ে দেখে। কিছু বলে না। আসলে তার ভিতরে ঝড় বইছে। এলো মেলো চিন্তার ঝড়। কোন কিছুই নির্দিষ্ট করে ভাবতে পারছে না ।
বন্যার চোখ এড়ায় না অমিত অন্যমনস্ক। সে ছবিটা সরিয়ে নেয়। তার মনে হয় অমিত খুব ক্লান্ত আর চিন্তিত। বিশ্রাম দরকার। সে অমিতের সোফার পিছনে দাড়িয়ে কপালে হাত রাখে। “ছোট কাকু, তুমি চোখ বুজে চুপ করে শুয়ে থাক আমি ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। আরাম পাবে।”

সত্যি সত্যি বন্যার সরু আর নরোম আংগুলের ছোয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে অমিত। বন্যা তার মাথাটা নামিয়ে এনে নীচে একটা বালিশ দিয়ে দেয়। পা দুটো আলগোছে তুলে দেয় সোফার উপর। নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে বন্যা অমিতের ঘুমন্ত মূখের দিকে। অজান্তেই মূখ দিয়ে বেরিয়ে আসে “হোয়াট অ্যা ম্যান!”

ঘন্টাখানেক ঘুমিয়েছে অমিত। তার চেতনায় ঘুমের ঘোরেও সতর্কতা ছিল বলে হঠাত করেই ঘুম ভেংগে গেল। কে যেন তার বুকের উপর শুয়ে আছে। নড়াচড়া না করে বুঝার চেষ্টা করলো। মূহুর্তেই মনে পড়লো সে বন্যার ঘরে। মোবাইলের আলোয় দেখল মেয়েটা মেঝেতে বসে তার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সন্তর্পণে মাথাটা তুলে ধরলো অমিত। তার পর পাজা কোলা করে নিয়ে গেল বিছানায়। ঘুম না ভাংগিয়ে শুইয়ে দিল। চাদরটা টেনে দিয়ে ফিরে এল সোফায়।

মুচকি হাসি ফুটলো বন্যার ঠোটে। অমিত জানেনা তাকে পাঁজা কোলা করার সময়েই ঘুম ভেংগে গেছে বন্যার। তারপরও ঘুমের ভান করে দেখতে চেয়েছে কি করে অমিত। অন্ধকার ঘরে একটা সোমত্ত মেয়েকে বুকের উপর পেয়েও ভাবান্তর হয়নি। এই না হলে প্রিন্স। ছোট বেলা থেকে যার গল্প কেবল শুনেই আসছে। দেখার সুযোগ হয়নি। আজ যখন হল তখন সত্যি সত্যি গর্বে বুকটা ভরে গেল তার।

আরও ঘন্টাখানেক পর অমিত ফিরে এল নিজের রুমে। কিন্তু বিছানায় গেল না। বাথ রুমের দরজাটা আধ খোলা রেখে বসে রইল কমোডের উপর। এক সময় অধৈর্য হয়ে পড়লো সে। ম্যাগীকে মনে হল ফালতু কথা বলেছে। তার পরও বসে রইল। অপেক্ষা কষ্টকর । কিন্তু এর ফল সব সময়ই ভালো।

ভোর রাতের দিকে এল ওরা। সংখ্যায় তিন জন। কালো কাপড়ে মূখ ঢাকা। পানির পাইপ বেয়ে উঠেছে। বারান্দার রেলিং টপকে ভিতরে ঢুকলো। প্রথমে দরজা খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারলো না। ছিটকানী লাগানোর পরেও বাড়তি সতর্কতা হিসাবে তলায় কাঠের গুড়ি দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে অমিত। দরজা খুলতে না পেরে করিডোরের দিকের জানালার কাঁচ ভেংগে ফেললো। পর পর তিনটে গুলি করলো বিছানা লক্ষ্য করে।

গত কিছু দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। আজ দুপুরে একটু খানি সূর্য়ের ঝলক দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেছে। গ্রামে গঞ্জে বন্যার আভাষ। সন্ধ্যে থেকে আবার আকাশের মূখ ভার। রাত বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে গুড়ি গুড়ি তার পর মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। আশ্রমের দীঘির পাড়ে বাধানো ঘাটে বসে আছে অঞ্জলী। তার মন ভাল নেই। দীঘির জলে বৃষ্টির ফোটার শব্দ একটানা শুনলে মনে হয় কেউ গান গাইছে। কষ্টের গান। বিরহের গান। “এ ভরা ভাদর , মাহ ভাদর শূণ্য মন্দির মোর।” গুন গুন করে মেঘদূত আবৃত্তি করছে। দীঘির মতই টুই-টুম্বুর যৌবন আজ শেষ পথে। ভাগ্য কি নিষ্ঠুর খেলাটা্ই না খেলছে ওকে নিয়ে। অনেক অনেকক্ষণ ধরে ঘাটলায় বসে বৃষ্টিতে ভিজছে অঞ্জলী। মাথার উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ে কানের পাশ, ভুরু, চোখের পাতা আর থুতনি বেয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে অশ্রু জল। কিন্তু বুকের কষ্ট তাতে বাড়ছে বৈ কমছে না।

মাঝরাতের পর ঘরে ফিরে এল অঞ্জলী। আয়নার সামনে দাড়িয়েঁ ভেজা কাপড় ছাড়লো। একে একে সব। একটা সূতাও নেই পরনে। এত সুন্দর একটা শরীর। অথচ কারো কোন কাজে আসলো না। তোয়ালে দিয়ে ভাল করে মাথা মুছলো। খুব সুন্দর করে সাজলো। ব্রা প্যান্টি পড়ে একটা ট্রাকস্যুট চাপালো গায়ে। মাঝ রাতে এমন উদ্ভট আচরণ বোধগম্য নয়। পায়ে স্নীকার পড়লো। পিস্তলটা নিল। সাতে একটা স্পেয়ার ম্যাগজিন। ট্র্যাক স্যুটের উপর রেইন কোট চাপালো। অন্ধকার রাতের সাথে কালো রেইন কোট মিশে গেল একাকার হয়ে।

গাড়ি চালিয়ে চলে এল রোহিতের বাড়ির সামনে। মাইলখানেক দূর থেকেই গাড়ির হেড লাইট অফ করে দিয়ে ভুতের মত এগিয়ে এল। পার্ক করলো মেইন রোডের পাশে সাইড রোডের একদম এক কিনারায়। দুই লাইট পোস্টের মাঝখানে অন্ধকার মত স্থানে। গাড়ির রং ডার্ক ব্লু। ফলে বিশেষ নজর দিয়ে লক্ষ্য না করলে কেউ দেখতে পাবে না। টহল পুলিশের ভয় আছে। তবে সেটা ম্যানেজ করে নিয়েছে থানার তরুণ ইন্সপেক্টর সুব্রতকে ফোন করে। সুব্রত একসময় আশ্রমে ছিল। অঞ্জলীকে মাতৃজ্ঞান করে। “আপনি নিশ্চিন্তে বেড়াতে যান মিস। কেউ কিচ্ছু বলবে না। যদি এসকর্ট লাগে আমাকে বলবেন।”
“না না আমি শুধু একটু ঘুরে বেড়াবো। বৃষ্টি ভেজা মাঝ রাতের শহর দেখা হয়নি কখনও।”
প্রায় দুই ঘন্টা হলো অঞ্জলী বসে আছে বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে। বৃষ্টির বেগ আরও বেড়েছে। এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। অঞ্জলী নাইট গ্লাস চোখে নিয়ে রোহিতের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সে যে আসলে কেন এখানে এসেছে, কি দেখতে চায় নিজেই জানে না। অমিত রাতের বেলা বারান্দায় আসবে আর সে দূর থেকে দেখতে পাবে এমন পাগলামী শুধু কল্পনাতেই মানায়। প্রেমিক প্রেমিকারা মনে হয় আসলেই পাগল।

সুনসান নীরবতার মাঝখানে ক্লান্ত অঞ্জলী আবারও নাইট গ্লাস তুললো। রাতের অন্ধকার ভেদ করে তার সামনে রোহিতের দোতলার বারান্দা লাফ দিয়ে এগিয়ে এল। খোলা বারান্দার রেলিং টপকাচ্ছে তিনজন মূখোশধারী লোক। মাই গড। কারা ওরা। পানির পাইপ বেয়ে নেমে আসছে দ্রুত। লাইট না জ্বালিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল অঞ্জলী। যারাই হোক তাদের এ পথ দিয়েই যেতে হবে।

একটা ছেলে জানালা দিয়ে গুলি করছিল। বাকী দুজন দুদিক থেকে তাকে কাভার দিচ্ছিল। প্রথম গুলির পরই চীৎকার শুনতে পেল আতাতায়ীর দল। খুব জোরে নয় তবে মরণ চীতকার। হকচকিয়ে গেল তারা। সেকেন্ডের ব্যবধানে আরো দুটি গুলি করলো। তারপর রেলিঙ টপকে পানির পাইপ বেয়ে নেমে গেল।

লোকগুলির রেলিঙ টপকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলো অমিত। তার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে বারান্দায় এসে উকি দিল। একটা গাড়ি স্টার্ট নেবার আওয়াজ পেল অমিত। পালাচ্ছে ওরা। মিশন সফল করে পালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে গা কাঁটা দিল তার। বেঁচে আছে এ আনন্দে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল। ম্যাগী সাবধান না করলে আজ মরে ভুত হয়ে থাকতো অমিত। প্রথম গুলির মাজল ফ্লাশ দেখে বুদ্ধি করে চীতকার করেছিল। তাই আততায়ীরা বুঝতে পারেনি চাদরের তলায় অমিত নয় বালিশ রয়েছে।

পড়িমড়ি করে পালাচ্ছে আততায়ীর দল। লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি। কখন যে স্টাট বন্ধ হয়ে যায় তার ঠিক নেই। লাইট জ্বালাতে পারছে না ধরা পড়ার ভয়ে। খুব দ্রুত মেইন রোডে উঠে এল। টের পেল না তাদের পিছনে পিছনে আসছে অঞ্জলীর গাড়ি। এটারও লাইট অফ। লেটেস্ট মডেলের আধুনিক গাড়ি। নিঃশব্দ ইঞ্জিন। বেশ দূরত্ব রেখে ফলো করছে অঞ্জলী। ফাঁকা রাস্তায় ঝড়ের বেগে পালাচ্ছে ওরা। পেছনে আঠার মত অঞ্জলীর গাড়ি। মিনিট বিশেকের মধ্যে গাড়িটা রায় টেক্সটাইলের প্রাইভেট রাস্তার দিকে বাক নিল। মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত নিল অঞ্জলী। গতি বাড়িয়ে আচমকা যমদূতের মত পিছন থেকে ধাক্কা মারলো। গাড়িটা উল্টে রাস্তা থেকে খাদের দিকে গড়াতে লাগলো। সাঁ করে বেরিয়ে গেল অঞ্জলী। তার নিজের গাড়িতে এমন কি একটা আঁচড়ও লাগেনি। যদি লোকগুলি বেঁচে থাকে তো ভাল। মরে গেলেও তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। গাড়ি চালিয়ে ঘোর পথে চলে এল আশ্রমে। ভোর হতে আর বাকী নেই তেমন। আশ্রম জাগবে এখুনি।

হতভম্ব অমিত বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত। পর্দা টেনে দিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো সে। চাদর বা কোল বালিশে কোন ছিদ্র নেই। তিনটে বুলেটই বিপরীত দিকের দেয়ালে ঠুকে চল্টা তুলে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে আছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আততায়ীরা গুলি করেছিল এটা কি প্রকাশ করবে সে বাড়ির লোকদের কাছে? নাকি চেপে যাবে? অনেক ভেবে চিন্তে চেপে যাওয়াই স্থির করলো। বুঝতে হবে কার কি প্রতিক্রিয়া। কাউকে সতর্ক করতে চায় না সে।

খুব ভোরে উঠার অভ্যাস বন্যার। আজ বেশী রাতে ঘুমানোর কারণে তখনও ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম ভাংলো ফোনের শব্দে। এ অসময়ে ফোন পেয়ে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল তার। চোখ বন্ধ রেখেই খিস্তি দিল “হু ইজ দ্যাট বোগাস?”

“গুড মর্নিং বন্য, মাসিমনি বলছি।”

“তুমি এত সকালে?” আড়মোড়া ভেংগে হাই তুললো বন্যা। “বলেছি না আমাকে বন্য বলবে না।”

“হা হা হা ঠিক আছে বন্য আর তোমাকে বন্য বলবো না।”

“মাসিমনি আবার? কেন ফোন দিয়েছ বলো।”

“না মানে কাল তো তোরা অনেক আনন্দ ফুর্তি করলি। ভাবলাম একটু খবর নেই।”

“ফুর্তি না ছাই। খেয়েদেয়ে সবাই টুক করে ঘুমিয়ে পড়লো। কাকুর সাথে একটু গল্প করবো তাও হলো না।”

“এত পথ জার্নি করে এসেছেন ক্লান্ত ছিলেন নিশ্চই।”

“জানো মাসিমনি রাতের বেলা না কাকু আমার ঘরে এসেছিল।” হরবর করে রাতে যা কিছু ঘটেছে সব বললো অঞ্জলীকে।

সব শুনে অঞ্জলী বললো, “তা তোমার এ বিখ্যাত কাকুর সাথে আমাকে একটু আলাপ পরিচয় করিয়ে দাও!”

“চলে এস একসাথে ব্রেক ফাস্ট করবো।”

ভয়ে, আতংকে, অস্থিরাতায় কাতর হয়ে আছে অমিত। এ কি সর্বনাশা খেলার মূখে পড়লো। কে তাকে হত্যা করতে চায়? মেজদা এতটা নীচে নেমে গেল সম্পত্তির লোভে? অথচ কাল রাতেও তাকে ছোট বেলার মত মাছের কাঁটা বেছে দিয়েছে। মানুষের আলো আর অন্ধকারের চেহারায় এত ফারাক কেন? এজন্যই কি ঠাকুরমা তার দেশে আসার ব্যাপারে নিস্পৃহ ছিলেন? এজন্যই কি পিসিমা তাকে দ্রুত দেশ ছাড়তে বলেছিলেন? কার কাছে যাবে অমিত? কে আছে বান্ধব?

তার কেবলই মনে হতে লাগল এ দুঃসময়ে একজন বান্ধব খুব বেশী দরকার। ম্যাগী তার জন্য জীবন দিয়ে দেবে। কিন্তু বাইরের মানুষ হওয়ায় তেমন কাজে আসবে না। আত্মীয়দের কারো উপরেই ভরসা রাখতে পারছে না। অমিত কি ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবে? কোথায় যাবে অমিত? কে আছে স্বজন?

আছে। স্বজন আছে। তার মনের ভিতর থেকেই কে যেন বললো। দুঃসময়ের সাথী অঞ্জলী আছে। জীবনটা যখন বখে যাওয়ার পথে ছিল তখন তার মমতা আর ভালবাসাই অমিতকে আজকের পর্যায়ে এনেছে। ঠাকুরমার অঢেল টাকাকড়ি তার কোনই কাজে আসেনি। কিন্তু অঞ্জলীর বুকভরা ভালবাসা তাকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আজকের অমিত সে তো অঞ্জলীরই অবদান। তার কাছেই যাবে অমিত। একটা সাপোর্ট আর একটা নিরাপদ আশ্রয় দরকার।

বড়দা তার কালো শেভ্রোলেটা ছেড়ে দিয়েছে। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হলো অমিত। বাইরে গরম। জিনস আর ফতোয়া পরলো। পায়ে রাবার সোলের কেডস। খুবই ক্যাজুয়াল। আয়নায় একবার দেখে নিল। মন্দ না। ফর্সা ভরাট স্বাস্থ্যের মানুষ। যা পরে তাতেই মানায়। একটা আর্মস থাকলে একটু সেইফ বোধ করতো। কিন্তু এদেশে তার লাইসেন্স নেই। গাড়ির কাছে এসে কি মনে করে ড্রাইভারকে ছেড়ে দিল। নিজেই ড্রাইভ করবে। ড্রাইভার কাচুমাচু করছিল। “বড় স্যার রাগ করবেন” ইত্যাদি বলে। কিন্তু অমিত কাটিয়ে দিয়েছে।

আশ্রমের গেইটে এখনও পুরনো দারোয়ান রামলাল ডিউটি করে। দারোয়ান হলেও এ বাড়িতে তাকে যথেষ্ট সম্মান করা হতো। ছোট বেলায় অমিত তার কাঁধে পিঠে চড়েছে। হর্ন বাজাতেই রামলাল গাড়ির কাছে এসে সেলাম ঠুকে বললো, “কার কাছে যাবেন বাবুজী?” বয়স হয়েছে রামলালের। কিন্তু এখনও শক্ত সমর্থ। এক্স আর্মি ম্যান। একদম কেতা দুরস্ত।
“রামু কাকা, আমি অমিত, আমাকে চিনতে পারছো না?” গাড়ির কাচ নামিয়ে অমিত গলা বাড়ায়।
রামলাল চিনতে পারে না। তরুণ অমিতের সাথে এ লোকের অনেক তফাত। মূখ ভর্তি দাড়ি থাকায় আরও বেশী অচেনা লাগে। রামলাল অসহায় ভংগী করে। “আমি চিনতে পারছি না বাবুজী, আমাকে বলেন আপনি কার কাছে যাবেন?”
“অঞ্জলীর কাছে যাবো।”
“মা জননী তো খুব সকাল বেলা বেরিয়ে গেছেন। আপনি তার অফিসে বসুন।”
এধরণের সমস্যা অমিতের মাথায় ছিল না। রামলাল তার দায়িত্বে অটল। কেউ এসে যতক্ষণ পরিচয় নিশ্চিত না করবে ততক্ষণ সে মানবে না। তবে খুব সম্মান করে অফিস রুমে বসতে দিল। রিসেপশনে সুদীপাকে জানিয়ে গেল ইনি মা জননীর মেহমান।
সুদীপা মেয়েটি বুদ্ধিমতী আর স্মার্ট। সে অমিতকে কফি দিল। তার পর অন্য রুমে গিয়ে অঞ্জলীকে ফোন দিল।

“ম্যাডাম আমি যদি ভুল না করে থাকি ভদ্রলোক বিদেশী সাংবাদিক মহিলার হাজবেন্ড আব্রাহাম গোমেজ। কিন্তু এখন বলছেন তার নাম অমিতাভ রায় চৌধুরী। আমি বুঝতে পারছি না আমার কি করণীয়।”

“তুমি সার্বক্ষণিক তার কাছাকাছি থাক। তিনি যেখানে যেতে চান, যা করতে চান মানা করো না। আমি আসছি।” অঞ্জলী ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বলল। সে যাচ্ছিল রোহিতের বাড়িতে। অমিতকে দেখবে বলে। এখন ম্যাগীর বাসার পথ ধরলো।

সুদীপা রাখতেই অঞ্জলী ম্যাগীকে ফোন দিল। “ম্যাগী তুমি কি একবার আশ্রমে আসবে? আমার জরুরী দরকার। বিপদে পড়েছি তোমার সাহায্য লাগবে।”
“ঠিক আছে আমি আসছি।”
“রেডি হও পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি তোমাকে পিক করবো”

ম্যাগী সকাল থেকে অসংখ্যবার অমিতকে ট্রাই করেছে। কিন্তু পাচ্ছে না। অমিতের ফোন সুইচড অফ। আসলে রাতের বেলার আততায়ী হামলার আগে আগে অমিত ফোনের সুইচ অফ করে রেখেছিল যাতে আচমকা বেজে উঠে তার অবস্থান ধরা না পড়ে। উত্তেজনা আর অস্থিরতায় অন করতে ভুলে গেছে। ম্যাগী খুব ভয় পেয়ে গেল। অমিতের কিছু হয়নি তো? অমিত কে পাওয়া যাচ্ছে না আবার অঞ্জলীর জরুরী ফোন। সে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নেমে এল। নীচে আসতেই দেখল অঞ্জলীর গাড়ি ব্রেক কষছে। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় আশ্রমে পৌছে গেল তারা। ম্যাগীকে সাথে নিয়ে খুব দ্রুত বেগে অফিস রুমে ঢুকলো অঞ্জলী।

অঞ্জলীর অনুপ্রবেশ অমিত টের পেলো না। সে নিবিষ্ট মনে দেয়ালের কিছু ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাড়ির লনে অঞ্জলীর সাথে সে ব্যাডমিন্টন খেলছে। রায় পরিবারের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা। ঠাকুরমা থেকে শুরু করে সকলে অংশ গ্রহণ করতো। সে বার সিংগেলস এ ফাইনাল খেলেছিল অমিত আর অঞ্জলী। এটা তারই ছবি। অমিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খুব স্মৃতি কাতর নস্টালজিক ছবি।

“কেমন আছ অমিত?” অঞ্জলী কথা বললো। অবিকল ম্যাগীর গলায়।

“ম্যাগী তুমি?” বলতে বলতে ঘুরলো অমিত এবং অঞ্জলীকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।

“ভয় পেয়ো না ম্যাগীও আছে।” অঞ্জলী সামনে থেকে সরে দাড়াতেই ম্যাগীকে দেখতে পেল অমিত।

“না মানে ইয়ে ” আকস্মিক ম্যাগীর কন্ঠ শুনে আর অঞ্জলীকে দেখে অমিতের হতভম্ব ভাব এখনও কাটেনি। সে বুঝতে পারছেনা কি বলবে।

“এসবের কোন দরকার ছিল না অমিত। বউ নিয়ে অনেক আগেই তুমি দেশে এসেছ। আশ্রমে ঢুকেছ নাম ভাড়িয়ে। বিয়ের কথাটা গোপন রেখেছ। আসলে কার কাছ থেকে কি লুকাতে চাইছ তুমি আমি জানিনা।”

“তুমি যা বলছ সেটা ঠিক নয় অঞ্জলী।” অমিত নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে।

“কোনটা ঠিক আর কোনটা না এ নিয়ে তর্ক করতে চাইনা অমিত। তুমি কেমন আছ বল।” অঞ্জলীর কন্ঠ নিরুত্তাপ।

“ভাল” হঠাত গম্ভীর হয়ে যায় অমিত। অঞ্জলীর নিস্পৃহ আচরণ তার ভাল লাগছে না।

“নাস্তা হয়নি এখনও তাই না?” চলো আমারও ক্ষিধে পেয়েছে। “ভাল কথা তোমার বউ খুব সুন্দর হয়েছে। আমার খুব ভাল লেগেছে ওকে। কনগ্রাচুলেশন।”

“অঞ্জলী, তোমার একটা ভুল হচ্ছে।” এবার ম্যাগী কথা বলে।

“শুন মেয়ে, পরিচয়ের আগে যা বলেছ, যা করেছ তা ভুলে যাও। আমি তোমার বরের তালতো দিদি। তুমিও আমাকে দিদি বলবে। এ দেশে এটাই নিয়ম।”

“অঞ্জলী তুমি কারো কথা শুনতে চাইছো না কেন?” অমিতের রাগ গলায় প্রকাশ পায়নি এখনও।

“আমার যত টুকু মনে পড়ে তুমি আমাকে দিদি বলতে। আমেরিকান পরিবর্তনটা আমার ভাল লাগছে না। এস নাস্তা করবে।” অঞ্জলী তার ভিতরের আবেগটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

“কর্মচারীদের সাথে বসে আমি নাস্তা করি না।” অমিতের মাথায় হঠাত রক্ত চড়ে গেছে। অঞ্জলীর এমন আচরণ তার কাছে প্রত্যাশিত নয়।

“অনাথ আশ্রম রায় গ্রুপের কোন প্রতিষ্ঠান নয় মিঃ চৌধুরী। রায় গ্রুপ এর ডোনর মাত্র। এমন ডোনর আরও অনেক আছে।”

অঞ্জলী অমিতের রাগটাকে আরো উস্কে দিতে চাইছে। কারণ অতীতের কোন সম্পর্কের স্মৃতি তার দাম্পত্য জীবনে ছায়া ফেলুক এটা অঞ্জলী চায় না। মানুষটা সুখী হোক। তার নিজের কষ্টটাকে বুকের ভিতরেই চাপা দিল অঞ্জলী্। যে সম্মান আর যে ভালবাসা এ যুবকের কাছ থেকে পেয়েছে এ স্মুতিটুকু নিজের করেই অঞ্জলী বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে। আজ ঠাকুর মা নেই। তার আশ্রয়ে অঞ্জলী আজ সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে পারছে। সেই কৃতজ্ঞতা সে ভুলবে কেমন করে?

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামাতে পারছে না সে। ইচ্ছে করছে অমিতকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় পাগল করে দিতে। কাল সারা রাত বাইরে বাইরে কাটিয়েছে। একনজর দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় বসে থেকেছে। এখন তার স্বপ্নের রাজকুমারকে সামনে পেয়েও তার কাছে যেতে পারছে না। হাহাকার করা কান্নার আওয়াজ বুকের ছাতি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে অঞ্জলী কোন ভাবেই দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। যে সুখে আছে তাকে সে রকম থাকতে দিতে হবে।

অঞ্জলীর পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা বোধ করছে অমিত। তার সবচে বেশী রাগ হচ্ছে ম্যাগীর উপর। গবেট মেয়েটাই তাকে ধারণা দিয়েছে অঞ্জলী তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে জন্যই এমন পাগলের মত ছুটে এসেছে তার কাছে। কিন্তু অঞ্জলীর এমন নিস্পৃহ আচরণ চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে অমিত তার কেউ নয়। অতীত এখন কেবলই অতীত। অঞ্জলীর কথায় তীব্র অপমানিত বোধ করে অমিত। তার নীল রক্তে বিস্ফোরণ ঘটে।

“ওয়েল মিস্ চ্যাটার্জী, আই এম সরি ফর মাই ইগনোরেন্স।” তার গলা গম গম করে উঠে। “ম্যাগী চলো” খপ করে ম্যাগীর হাত ধরে টান দেয় অমিত। আচমকা টানে অমিতের বুকের উপর এসে পড়ে ম্যাগী। তাকে বাম বগলের সাথে চেপে ধরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় অমিত।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না অঞ্জলী। হু হু করে কান্নায় ভেংগে পড়ে। আর কত পরীক্ষা নেবে ঠাকুর!

“ম্যাডাম” ইন্টারকমে সুদীপা।
“বল সুদীপা”
“অতিথিরা চলে গেছেন। আজকের পেপারে রায় গ্রুপের একটা খবর আছে।”
“পাঠিয়ে দাও।”

“পিকআপ ভ্যান এ হামলা ঃ কর্মচারী আহত” শিরোনামে স্থানীয় একটা পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে গত রাত ভোরের কিছু আগে মালামাল পরিবহনের সময় রায় গ্রুপের একটি পিকআপভ্যান ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তারা কর্মচারীদের মারধর করে মালামাল লুটে নিয়ে যায়। চলে যাবার সময় তারা গাড়িটাকে ধাক্কা মেরে পাশের খাদে ফেলে দেয়। গাড়িটাতে অনেক মূল্যবান ফেব্রিক্স ছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। আহত কর্মচারীদের একজনের অবস্থা আশংকাজনক। দুজনকে প্রাথমিক চিকিতসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

খবরটা খুব তা*্তপর্যপূর্ণ। এ ঘটনার আড়াল দিয়ে লাখ পাচেক টাকার মাল সরানোর একটা সুযোগ পেল অসত কর্মচারীদের একটা গ্রুপ। তারা জামাই বাবুর বাড়ির রেলিঙ এ কেন গিয়েছিল, কেন এমন পড়িমড়ি করে পালাচ্ছিল তার কোন ব্যাখ্যা খুজেঁ পায় না অঞ্জলী। সে যখন ধাক্কা দেয় পিকআপটাতে কোন মাল সামানা ছিল না। জামাই বাবুকে বিষয়টা জানানো দরকার। ফোন তুলতে গিযে আবার রেখে দিল অঞ্জলী। কারণ এতে ধাক্কার সাথে সে জড়িয়ে পড়বে।

সুব্রতকে ফোন দিল সে। ওপাশ থেকে সুব্রতর গলা পেতেই বললো, “আজকের পেপারে রায় গ্রুপের বিষয়টা দেখেছ?”
“ইয়েস মিস।
“আমার কেন জানি ধারণা এক্সিডেন্টটা সাজানোও হতে পারে। এর আড়ালে কেউ মালামাল সরাচ্ছে।”
“এনি ক্লু মিস?”
“না নিছক আমার অনুমান। ভাল কথা রায় টেক্সটাইল এর মূল মালিক অমিতাভ রায় চৌধুরী এখন দেশে আছেন, জান?”
“ইয়েস মিস। উপরতলার লোকদের খবর আমাদের রাখতেই হয়।”
“কোন যোগসূত্র খুজেঁ পাচ্ছ?”
“আপনি বলতে চাইছেন আশ্রমে অনুপ্রবেশ, মনি শংকর বাবুর উপর হামলা, অমিত বাবুর দেশে ফেরা আর আজকের এ ভ্যান লুট এসবের মাঝে কোন যোগসূত্র আছে কিনা?”
“তুমি আগের মতই বুদ্ধিমান আছ, নষ্ট হওনি।”
“আপনার আশীর্বাদ মিস।
“আর একটা কথা, বড়লোকদের অনেক অচেনা শত্রু থাকে। আমি অমিতের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি।”
“আমি একটা চোখ রাখবো মিস।”
“থ্যাংকিউ বেটা, মামনির কাছে চা খেয়ে যেও।”

সারা রাস্তা গাড়িতে কোন কথা বললো না অমিত। খুব রেগে আছে। ম্যাগী পড়েছে উভয় সংকটে। অঞ্জলী বা অমিত কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না। মেজাজ বিগড়ে আছে তারও। পুরো ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে সে। ফোন করে জানিয়ে দিল আজ অফিসে যেতে পারবে না। অমিতকে বললো, “হোটেলে চল।”

হোটেলই তার অস্থায়ী নিবাস। মনি শংকর বলেছিল ফ্লাটের ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু ম্যাগী মানা করে দিয়েছে। অল্প দিনের বিষয়। হোটেলে ফিরে অমিতের কাছ থেকে আততায়ী আক্রমণের কথা শুনে ঘাবড়ে গেল ম্যাগী। তার আশংকাই সত্যে পরিণত হয়েছে।
“শুন তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে।”
“আমার একটা আর্মস দরকার ছিল, খুব অসহায় বোধ করছি।” অমিত বললো।
“আমারটা নেবে? সব জায়গায় ডিক্লেয়ার করা আছে।”
“কিন্তু এটা আমি ইউজ করলে বেআইনী হয়ে যাবে। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটা দরখাস্ত করি।”
“গুড আইডিয়া, তোমার আমেরিকান পাসপোর্ট আছে। আমি দুতাবাসকে দিয়ে তদ্বির করাতে পারবো।”

ইতোমধ্যে নাস্তা চলে এসেছে। ম্যাগী হোটেলে ফিরে আগে রুমসার্ভিসকে ফোন করে নাস্তার কথা বলেছিল। অমিত খেতে বসে খেতে পারলো না। রাতের ঘটনার পর সকালে অঞ্জলীর আচরণ সব মিলিয়ে তার ক্ষুধা তৃষ্ণার অনুভুতি লোপ পেয়েছে।

“তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো কেন? সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

“কিছুই ঠিক হবে না। আমার এক জীবনের অপেক্ষা বৃথা হয়ে গেল। যে মানুষটাকে আমি রেখে গিয়েছিলাম তার ছিটে ফোটাও এখনকার অঞ্জলীর মাঝে নেই। আমার একটুখানি হাসি মূখের বিনিময়ে সে নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারতো।”

“আজও তাই দিচেছ। শুধু তুমি বুঝতে পারছো না। শুন, তোমার এখানে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। মনি শংকরের অফিসের লোকজন এটা চেনে। তোমার সাথে আমার যোগাযোগটা আরও কিছু দিন গোপন রাখতে চাই। হিল্টনে তোমার জন্য একটা রুম বুক করছি।”

“গোপন রইল কোথায়? অঞ্জলীতো সবটাই জানে।”
“জানে না, অনুমান করেছে। সেটা নিশ্চিত হবার জন্যই আমার গলা নকল করেছে সে। রিসেপশনিস্ট মেয়েটা আগেরবার তোমাকে আমাকে একসাথে দেখেছিল। ভুলটা এখানেই হয়েছে।”

“তা হলে এখন আর এসব গোপন করে কি হবে?”
“তোমার কি ধারণা অঞ্জলী জনে জনে বলে বেড়াবে তুমি আমি স্বামী স্ত্রী হিসাবে হোটেলে ছিলাম? মোটেও না। আমি আজই তার সাথে কথা বলবো। তার ভুল ভাংগাবো।”

“যা খুশী কর। আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না।”

মনে মনে হাসলো ম্যাগী। অবশ্যই যা খুশী করবে। এই অস্থির, অসহায়, নির্ভরশীল অমিতকেই তো সে খুঁজছে দিনের পর দিন। অঞ্জলী ভালবাসে তো বাসুক না। সেও অমিতকে ভালবাসে। সেও তাকে চায়। নিজের দেশ ছেড়ে, কর্ম ছেড়ে কিসের আশায় পড়ে আছে এখানে? এই একটা মানুষকে ভালবেসেইতো? ভালবাসাকে পূর্ণতা দিতে যা খুশী তাই করবে ম্যাগী।

“আমি না ফেরা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবে না, কারো ফোনও রিসিভ করবে না। তোমার ফোনটা মনে হয় সুইচড অফ আছে, তেমনই থাক।”
অমিত উপরে নীচে মাথা নাড়লো সম্মতির ভংগীতে।

ম্যাগী বেরিয়ে গেল। অমিত দেখল ম্যাগীর টেবিলে একটা জনি ওয়াকারের বোতল । ছিপি খোলা হয়নি। মাঝে মাঝে পার্টিতে এক দুই চুমুক দিলেও ড্রিংকস এ অভ্যস্ত হয়নি অমিত। কি মনে করে বোতলটা খুলে সরাসরি গলার ভিতর ঢাললো খানিকটা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার। দেখতে দেখতে বোতলটা অর্ধেক হয়ে গেল। বেশ নেশা মত হয়েছে তার। মনের মাঝে ফুরফুরে চাংগা একটা ভাব আসতে শুরু করেছে।

কে বলেছে দেবদাস মরে গেছে? ধ্বংসের বীজ সবার মাঝেই উপ্ত। সময় সুযোগে আমরা সবাই দেবদাস। হা হা হা হা হা। অমিত হাসছে। মাতালের হাসি।
“নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে/ চোখের তারায় রঙ লেগেছে/ আজ কোন দুঃখ নেই/
নেই কোন ভাবনা/এমনি করে দিন যদি যায় যাক না।” গান গাইতে গাইতে অমিত ভাবছে “বাহ্* মাতাল হয়ে গেলাম নাকি?” প্রফেসর ড. অমিতাভ রায় চৌধুরী মদ খেয়ে হোটেল রুমে মাতলামী করছে। কোন সাংবাদিক জানলে ব্যানার হেডিং করে দেবে। হা হা হা হা হা হা।

ম্যাগী আসলেই একটা জিনিয়াস। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অমিতের জন্য স্মল আর্মসের আবেদন জানাল। দেশের বিশিষ্ট জ্বালানী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. অমিতাভ রায় চৌধুরীর নিরাপত্তার জন্য এটা বিশেষ প্রয়োজন। হোটেল হিল্টনে স্যুইট বুক করলো। অ্যারাবিয়ান ব্যবসায়ী দম্পতি হিসাবে। কারণ অমিতের সাথে এখন আর খোলামেলা দেখা করার সুযোগ নেই। অ্যারাবিয়ান শেখের বউ হিসাবে হিজাব পড়ার সুযোগে নিজেকে আড়াল করতে পারবে। সে অনর্গল আরবী বলতে পারে। অমিত বলতে না পারলেও বুঝে। কাজেই কারো সন্দেহ উদ্রেক না করেই অমিতকে কাভার করতে পারবে সে। রোহিতের শেভ্রোলেটা আশ্রমের সামনেই রয়ে গেছে। একটা বিএম ডব্লিউ ভাড়া করলো সে। অমিতের অ্যারাবিয়ান নামে। কখনও নিজে ড্রাইভ করবে। প্রয়োজন হলে ড্রাইভার নেবে।

রুমে ফিরে দেখল অমিত চুপ করে শুয়ে আছে। প্রচুর মদ খেয়েছে। নেশার ঘোরে আছে সে। এতে ম্যাগীর কোন অসুবিধা নেই। বরং ভালই হলো। অমিতের কাপড় চেইঞ্জ করলো সে। শেখদের ড্রেস পরালো। নিজেও কালো বোরখায় আপাদমস্তক ঢেকে নিল। অমিতের চাপ দাড়ি, উজ্জল গোর বর্ণ আর উচ্চতার কারণে সহজে বুঝার উপায় নেই। আলখেল্লা আর পাগড়ি পরার পর একদম শেখ শেখ মনে হচ্ছে।

হোটেলের লবীটা একবার দেখে নিয়ে সন্তর্পনে বেরিয়ে এল রুম ছেড়ে। অমিতকে ধরে আছে কনুইয়ের কাছে। দ্রুত উঠে গেল গাড়িতে। কেউ তাদের দেখতে পেল না। দ্রুত ড্রাইভ করে চলে এল হিল্টনে। রিজার্ভেশন আগেই ছিল। চট করে ঢুকে গেল স্যুইটে। বাইরে ঝুলিয়ে দিল “ডোন্ট ডিস্টার্ব সাইন।”

অ্যারাবিয়ান শেখদের ইন্ডিয়া ভ্রমণের মসহুর কাহিনী সকলেই জানে। কেউ তাদের ডিস্টার্ব করলো না।

অঞ্জলীর ফোনে সেই যে ভোর বেলা ঘুম ভাংলো আর ঘুমাতে পারলো না বন্যা। কিছুক্ষন
এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লো। নাইটি চেঞ্জ করে ট্র্র্যাক স্যুট পড়লো। জিমের ব্যাপারে তার কোন আপোষ নেই। মাসিমনির কাছ থেকে মার্শাল আর্টে দীক্ষা নিয়েছে। এখন প্র্যাকটিস করছে একটা ক্লাবে। ছোট কাকুও নাকি খুব ভাল জিমন্যাস্ট। তার কাছ থেকে টিপস নিতে হবে। সে ঘরের মাঝেই হালকা ওয়ার্ম আপ সেরে নিল। শরীর মোটামুটি ঘেমেছে। নিঃশ্বাস বেশ দ্রুত। ছোট্ট বুক দুটো উঠানামা করছে। ছোট কাকুর রুমে যাবার আগে আয়নায় একবার তাকালো। বেশ লাগছে ওগে দেখতে। যেন একটা সদ্য ফোটা ফুল। আয়নায় তাকিয়ে হঠাত কেমন যেন একটু লজ্জা পেলো। সে বড় হয়েছে। এভাবে কাকুর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়া মোটেও উচিত হয়নি। আচ্ছা কাকু যখন ওকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গেল তখন কাপড়-চোপড় ঠিক ছিল তো? যতই ভাবে ততই তাকে লজ্জা এসে গ্রাস করে।

বন্যা যখন অমিতের রুমের দরজা নক করছে, অমিত তথন অঞ্জলীর অফিস রুম থেকে ম্যাগীকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে। বন্যা ভাবলো হয়তো কোথাও মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে। কিন্তু যখন বেলা বাড়ার পরও ফিরলো না তখন চারদিকে খোঁজ পড়লো। কোথায় যেতে পারে কেউ ভেবে পেল না। ব্রেকফাস্ট টেবিলে অমিতকে দেখতে না পেয়ে যারপর নাই হতাশ হলো রোহিত। রীতিমতো মঞ্জুকে বকাঝকা শুরু করলো, “কেমন বউদি তুমি? এত বছর পর দেশে এলো তুমি তার কোন খোঁজই রাখছো না।” মঞ্জু খুব লজ্জা পেল। এটা তার উচিত হয়নি।

বন্যা অঞ্জলীকে ফোন দিল। “মাসিমনি সকাল থেকে ছোট কাকুকে খুজেঁ পাচ্ছি না। তুমি কিছু বলতে পারবে?”
“আমি কি তোমার ছোট কাকুর পি এ? আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“না মানে আমি সবখানে খোঁজ করছি তো তাই তোমার এখানেও করলাম। তুমি এত রেগে রেগে কথা বলছ কেন মাসিমনি? শরীর খারাপ?”
“সরি মা, আসলে কাজের চাপ তো অন্যমনস্ক ছিলাম।”
“জান কাকুকে কোথাও খুজেঁ পাচ্ছি না। বাবা খুব অস্থির হয়ে আছেন। তিনি ড্রাইভার ছাড়া বাবার গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছেন। এত বছর পর এ দেশের রাস্তাঘাট সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা কে জানে?”
“তুমি কিছু ভেবো না মা, যেখানেই থাকুন তিনি ভাল আছেন।”

অঞ্জলী বলতে পারলো না কিছুক্ষণ আগেই তার এখানে ছিল অমিত। বিদেশিনী সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে সে মৌজেই আছে। জীবন যৌবন যার ধ্যান করে কাটিয়ে দিল সে তাকে এমন করে চিট করবে ভাবতেও পারেনি অঞ্জলী। কি এমন হতো যদি সে সরাসরি বউকে পরিচয় করিয়ে দিতো? অঞ্জলী তো কোনদিন তাঁর চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি? “কেন এমন কষ্ট দিলে অমিত? কেন আমার কাছে সহজ ভাবে বললে না দেখতো অঞ্জলী বউটা পছন্দ হয় কিনা? তোমার বউ তো জানে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। এর পরও এই লুকোচুরি লুকোচুরি খেলা কেন? কেন আমার ভালবাসাকে এমন ভাবে অপমান করলে?” আপন মনে একা একা বিড় বিড় করছে অঞ্জলী। ঘোর কাটেঁ সুদীপার ফোনে।
“ম্যাডাম বড় স্যারের গাড়িটা আশ্রমের সামনে পার্ক করা আছে। রামলাল জানালেন, সকালের মেহমান এ গাড়ি করে এসেছিলেন। গাড়িতে ড্রাইভার নেই।”
“ঠিক আছে দীপা আমি দেখছি।”

অমিত গাড়ি নিয়ে যায় নি। গেল কোথায়? ম্যাগীর নাম্বারে ফোন দিলে জানা যাবে। কিন্তু ফোন দিতে ইচ্ছে করলো না। এই মেয়েটাকে এত ভালবেসে শেষ পর্যন্ত এই প্রতিদান? কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে তার টেনশন বাড়তে লাগলো। অমিত বাড়িতে না বলে বউ নিয়ে মস্তি করছে। সেতো আগে থেকেই করছিলো। হঠাত এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে উদয় হওয়া আবার বিলীন হওয়া এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে কি? ম্যাগী, অমিত দুজনই তাকে একটা কিছু বলতে চেয়েছিল। সে শুনেনি। কোথাও ভুল হলো নাতো? সবার আগে ওকে খুজেঁ বের করা দরকার।

সুব্রতকে ফোন দিল অঞ্জলী। “কি খবর ব্যাটা?
ওপাশ থেকে সুব্রতর গলা শুনা গেল, “এভরিথিং ইজ অলরাইট মিস। আমি পরিস্থিতি অবজারভ করছি।”
“অমিত কি তোমাদের অবজারভেশনে আছে?”
“সর্বশেষ তাকে আপনার এখান থেকে বেরিয়ে একজন মহিলাসহ হোটেল ম্যাডিসনে আসতে দেখা গেছে।”

“এটুকু আমি জানি। মহিলা একজন সাংবাদিক। আশ্রমের উপর নিউজ করেছিলেন। তারা কি এখনও হোটেলেই আছেন?”

“এক মিনিট হোল্ড করুন মিস।”
অঞ্জলী কানে ফোন ঠেকিয়ে অপেক্ষা করছে। মিনিট দুই পরে সুব্রত জানালো,
“সাংবাদিক মহিলার হোটেল রুমে কেউ নেই। তিনি মিঃ মনি শংকরের পি এস হিসাবে কাজ করছেন। আজ অফিসে যান নি। এ মুহুর্তে তিনি আমাদের ওয়াচ এ নেই। মিঃ অমিতকেও লোকেট করা যাচ্ছে না।”

” তুমি জান ব্যাটা মিঃ অমিত খুব ইম্পরটেন্ট পারসন। তার নিরাপত্তার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আই এক্সপেক্ট ইউর পারসোনাল এটেনশন।”

“আই এম টেকিং ওভার দি রেসপনসিবিলিটি মিস।”

“থ্যাংক ইউ ব্যাটা।

সুব্রতর ইনফরমার নজর রাখছে রায় টেক্সটাইলের আহত লোকটার উপর। কে আসছে, কে যাচ্ছে, কার কার সাথে কথা বলছে সব নোট করছে সে। এদিকে ম্যাগী লক্ষ্য করেছে হঠাত করেই সিধুর কর্মততপরতা খুব বেড়ে গেছে। মিল আর মনি শংকরের চেম্বারে ঘন ঘন আসা যাওয়া করছে। বেশী বেশী ফোন করছে। যখন তখন কাকে কাকে যেন ধমকাচ্ছে। চোখে মূখে সারাক্ষণ সতর্কতা আর লুকোচুরি ভাব।
এদিকে মনি শংকরও খুব উত্তেজিত । সে দিন বাজিতে বড় অংকের দাও মেরেছে। ম্যাগীর ধারণা দুজন মিলে বড় রকমের একটা কিছু ঘটাতে যাচ্ছে। ম্যাগী সিদ্ধান্ত নিল এ বিষয়টা জানতে হবে। সে মনি শংকরকে মোটামুটি প্রশ্রয় দিতে শুরু করলো।
“স্যার আমি খুব বোর ফিল করছি। অফিসের পরে আমার তেমন কিছু আর করার
নেই। ভাল কোন বিষয় পাচ্ছি না যা নিয়ে কোন এক্সক্লুসিভ করা যায়। ভাবছি ফিরে যাবো।”

“বলো কি? সময় না কাটলে আমার সাথে চলো। মাঠে রেইস দেখবে। একবার এটার স্বাদ পেলে আর ছাড়তে ইচ্ছা করবে না।”

“আমি হত দরিদ্র রিপোর্টার আমার কি আর ওসবে মানায়?”

“আজ বিকেলে ফ্রি থাকলে চলো একবার ঘুরে আসি।”

“ঠিক আছে স্যার, আমার সঙ্গ যদি আপনার ভাল লাগে তবে যাব বৈকি?”
“একবার সিধুকে ডাক।” মনি শংকর একটা নাম্বার এগিয়ে দিল ম্যাগীকে।
ম্যাগী নাম্বারটায় চোখ বুলাল। মনে মনে দুইবার আওড়ে গেথে রাখলো মনের পর্দায়। তারপর মনি শংকরের টেবিল থেকে ফোন দিল সিধুর মোবাইলে।

কাগজে কলমে সিধু রায় টেক্সটাইলের স্টোর ইনচার্জ। কিন্তু মনি শংকরের কাছ থেকে সে নিয়মিত একটা মাসোহারা পায়। বিনিময়ে রায় টেক্সটাইল যেন কোন মতেই লাভের মূখ না দেখে সে বিষয়টা নিশ্চিত করতে হয়ে সিধুকে। মনি শংকর চায় লোকসানের কারণে বিরক্ত হয়ে রোহিত মিলের দায়িত্ব ছেড়ে দিক। অবশ্য অমিত ফিরে আসায় সব হিসেব নিকেষ বদলে গেছে। অমিত যদি দায়িত্ব বুঝে নেয় তবে পুরনো ছক তেমন কাজে আসবে না।

সিধু আছে মহা আরামে। প্রতিষ্ঠানকে লোকসান করানোর জন্য এক দিকে চুরি করে মালামাল গায়েব করছে। আবার অন্যদিকে মনি শংকরের কাছ থেকে মাসোহারা পাচ্ছে। সংগোপনে তার নিজস্ব একটা এজেন্ডাও আছে। ম্যানেজমেন্ট তাদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে কমবেশী জানে। কিন্তু ইউনিয়নের ভয়ে হোক বা কোন অজ্ঞাত কারণেই হোক কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। মনি শংকরের সাথে আত্মীয়তার সূত্রে সে এমডিরও প্রিয়ভাজন। ফলে ম্যানেজার নিজেও সিধুকে সমঝে চলেন। যে যার মত লুটেপুটে খাচ্ছে। বেশ কিছু কর্মচারী আছে যাদের সুনির্দিষ্ট কোন কাজ নেই। তারা মাসে মাসে বেতন গুণছে। এরা সবাই সিধুর লোক। তাদের একমাত্র কাজ হলো পালা করে সিধুর বিকৃত কামনা চরিতার্থ করা। সবাই তারা সিফলিসে আক্রান্ত।

সিধু এল আধা ঘন্টা পর। মনি শংকর তার কাছে রায় টেক্সটাইলের আহত লোকটা সম্পর্কে জানতে চাইল। “এ ব্যাটা এরকম আধমরা হলো কি করে?”
“একটা গাড়ি পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল। ব্যালেন্স রাখতে পারেনি।”
“মিলের কি অবস্থা”
“আমরা এটাকে ইস্যু করে একটা মুভমেন্টের চেষ্টা করছি। অযৌক্তিক কম্পেনজেশন আর সিকিউরিটি ক্লেইম করবো। ব্যাটা যদি মারা যায় তাহলে মুভমেন্ট আরও জমে যাবে।”

“তোমাদের কি ধারণা, মূল মালিক দায়িত্ব বুঝে নেবেন?”

“তিনি যাতে ঘাবড়ে যান সে জন্যই আমরা এ মুভমেন্টের ব্যবস্থা করছি। কারণ তিনি দায়িত্ব বুঝে নিলে আমরা সবাই লুজার হবো।”

“বড়দার হাতে দায়িত্ব থাকলে তোমার আর তার লাভ হতে পারে। কিন্তু আমার তো তোমাকে পোষার ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই।”

“দেখুন জামাই বাবু, সব ইনভেস্টমেন্টেরই রিটার্ন পেতে একটা টাইম গ্যাপ প্রয়োজন। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে।”

“ধৈর্য ধরতে ধরতে তো ফতুর হয়ে গেলাম।”

মাত্র তিন দিনের মাথায় আর্মসের লাইসেন্স পেল অমিত। এক্ষেত্রে ম্যাগীর দৌড়ঝাপের পাশাপাশি পুলিশ ইনস্পেক্টর সুব্রতর ভূমিকার ছিল প্রশংসনীয়। লাইসেন্স পাবার পর ম্যাগীকে নিয়ে একটা ৯ এম এম ল্যুগার কিনলো অমিত। এক সময় শুটিং ক্লাবের মেম্বার ছিল। ক্লোজ রেঞ্জে তার হাত নেহাত খারাপ না। রিফ্লেক্সও ভাল। প্রচুর অ্যামুনিশনও কিনলো। বন্দুকের দোকানের মালিক হাসতে হাসতে বললো “স্যার কি কোন যুদ্ধে যাচ্ছেন?” অমিত জবাব দিল না। তবে সে যুদ্ধে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নাই।

গত কিছু দিন ধরে অমিত টের পাচ্ছে কে বা কারা তাকে সারাক্ষণ ফলো করছে। সে ফেউ এর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে কিন্তু সনাক্ত করতে পারছে না। তবে ম্যাগীর অ্যারাবিয়ান সাজার কৌশলটা খুব কাজে দিয়েছে। শেখের কাভারে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ তাকে কেউ ফলো করে না। কাভারটা অটুট রাখার জন্য খুব সতর্ক থাকে অমিত। নতুন করে কোন আক্রমণ হয়নি। কেউ ভয়টয়ও দেখায়নি। তার মানে এই নয় যে, অমিত নিরাপদ। তার ধারণা প্রতিপক্ষ তাকে অসতর্ক হবার অপেক্ষায় আছে।

ম্যাগীর প্রতি যারপর নাই কৃতজ্ঞ অমিত। তার দুঃসময়ে এমন বুক পেতে আগলে আছে যে তাকে ছাড়া অমিত কিছুই ভাবতে পারে না। শুধু জীবন বাঁচানো নয়, বেঁচে থাকাটা সুন্দর করার জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করছে সে। জীবন শুধু আদর্শের উপর বেঁচে থাকে না। এর জন্য জীবনটাকে উপভোগও করতে হয়। প্রাণ ভয়ে তাড়া খাওয়া, প্রেমিকার কাছ থেকে আঘাত পাওয়া একটা মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছে । সে দিন হোটেল রুমে ম্যাগীর সাথে এমন চমrকার এক সময়ই কাটিয়েছে সে।

মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ছিল অমিত। তবে চেতনা লোপ পায়নি। ম্যাগী তাকে ম্যাডিসন থেকে হিল্টনে নিয়ে এসেছিল শেখ সাজিয়ে। রুমে ঢুকেই বিছানায় ঝাপিয়ে পড়েছিল অমিত। শিশুর মত অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করেছিল। অঞ্জলীর বিরহ সে মেনে নিতে পারেনি। উপুর হয়ে থাকা অমিতের পিঠে পরম মমতায় হাত রেখেছিল ম্যাগী। কাঁদতে বারণ করেনি। ছোট বেলায় বাবা মা হারা এই মানুষটা যার ছত্র-ছায়ায় বড় হয়েছিল আজ তিনি নেই। নেই তার একমাত্র ভালবাসার মানুষ অঞ্জলী। ম্যাগী সাইকোলজি পড়েছে। সে জানে ছোটবেলায় মাতৃহারা শিশু তার ভালবাসার নারীর মাঝে মায়ের ছায়া খোজেঁ। অঞ্জলী কিছুটা সিনিয়র আর কেয়ারিং বিধায় অমিত একই সাথে মা আর প্রেমিকা দুজনকেই দেখে তার মাঝে। এ ভালবাসা বড় তীব্র আর আবেগময়। তাই অমিত কাঁদছে। কাঁদুক। কেঁদে কেঁদে তার মন হালকা হউক।

কষ্ট পাওয়া মানুষকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা বা কৌশল কোনটাই জানা নেই ম্যাগীর। তবে জড়িয়ে ধরে রাখলে খুব দ্রুত সামলে উঠে। ম্যাগী তাই করলো। উপুর হয়ে থাকা অমিতের মাথাটা কোলের উপর টেনে নিল। ধারণা করেছিল অমিত বাধাঁ দেবে। কিন্তু অমিত চুপ করে রইল। তার উরুতে মূখ গুজেঁ অনেক অনেক সময় ধরে কাঁদলো। ম্যাগী পুরোটা সময় তার পিঠে হাত বুলিয়ে গেল। এক সময় অমিত পাশ ফিরলো। কোলের উপর মাথা রেখেই চিত হলো। ম্যাগী তার চুলে বিলি কাটতে থাকলো। বাম হাত দিয়ে বিলি কাঁটার পাশাপাশি ডান হাত বুকের উপর রেখে আলাতো বুলাতে লাগলো।

একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ম্যাগী। কি সুন্দর একটা মানুষ। কত অসহায় আর বিপদেই না পড়েছে এখানে এসে। কোথাও এতটুকু দাঁড়াবার স্থান নেই। কত বড় লোকের সন্তান। অথচ নিজের দেশে নিজের একটা মাথা গুঁজার ঠাই নেই। নিরাপদ বোধ করতে পারে এমন কোন স্বজন নেই। ভালবাসার মানুষের সাথে ভুলবুঝাবুঝিতে চরম কষ্টে আছে এখন। বুকের ভিতর আবেগ উথলে উঠে তার। ঘাড়ের নীচে হাত নিয়ে মাথাটা তুলে চেপে ধরে বুকের সাথে। তারপর আলতো চুমু খায় ঠোটে। নেশার ঘোরে অমিতের লজিক ছিল খুব দূর্বল। মাথাটা পরিষ্কার কাজ করছিল না। সুস্থ সবল যুবা পুরুষ।
শরীর খুব দ্রুত সাড়া দিল। তারা পরস্পরকে পছন্দ করে। দীর্ঘ দিন এক বাড়িতে বসবাস করেছে। এক বিছানায় রাত কাটিয়েছে। বোঝাপড়ায় কোন ঘাটতি কখনও ছিল না। ম্যাগীর চুমুর জবাবে অমিতও চুমু দিল। চার ঠোট একত্র রেখেই ম্যাগী ফিস ফিস করলো, “আই লাভ ইউ ম্যান।”

পাগড়িটা রুমে ঢুকেই খুলে ফেলেছিল অমিত। ম্যাগী এবার তার আলখেল্লাও খুলে নিল। নীচে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। আহ কি ভীষণ পৌরুষদীপ্ত ফিগার। সামান্য নড়াচড়াতেই কিলবিল করছে পেশী। আস্তে আস্তে পাজামার ফিতেটা খুলে দিল ম্যাগী। তারপর পায়ের দিকে টান দিতেই সেটা কোমড় থেকে নেমে গেল। নিতম্বে আটকা পড়ায় অমিত পাছাটা উচু করে ঢিল দিল। পাজামা চলে গেল ম্যাগীর হাতে। শুধু বক্সার আর গেঞ্জি। অমিতকে লাগছে যেন রেস্টলিং তারকা। এখুনি রিং এ লাফিয়ে পড়বে। ম্যাগী চাইছিল তার কাপড় চোপড় অমিত খুলে নেবে। নিজেরটা নিজে খুলতে বেশ লজ্জা পাচ্ছিল ম্যাগী। কিন্তু পরে বুঝতে পারলো অমিত সেই সুক্ষ অনুভুতির পর্যায়ে নেই। বাধ্য হয়ে নিজের কাপড় চোপড় নিজেই ছাড়লো ম্যাগী। শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরা অবস্থায় আগেও অমিতের সাথে শুয়েছে ম্যাগী। কিন্তু অমিতের ভাবান্তর হয়নি। আজ নেশার ঘোরেই হোক কিংবা অঞ্জলীর প্রত্যাখ্যান জনিত বেদনায়ই হোক অমিত আজ তাকে রেসপনস করছে। এর চে বেশী কিছু ম্যাগীর দরকার নেই।

তবে প্রথমবার বলেই হয়তো ম্যাগীর লজ্জা কাটেনা। সে চাইছে অমিত তার উপর ঝাপ দিক, চিরে ফুরে শেষ করে ফেলুক। কিন্তু অমিতের কাছ থেকে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। চোখে মূখে একরাশ লজ্জা নিয়েই ম্যাগী বিছানায় গড়ান দিল। উঠে এল অমিতের বুকের উপর। গেঞ্জির উপর দিয়ে বুকের হালকা লোম বেরিয়ে আছে। ম্যাগী লোম গুলি ধরে একটু একটু করে পাকাতে শুরু করলো। বুঝতে পারছে তলপেটের নীচে অমিতের উত্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। ম্যাগী তার শরীরের ভার সম্পূর্ণ অমিতের উপর ছেড়ে দেয়। চাপ খেয়ে জাংগিয়ার ভিতরে ফনা তুলতে থাকে অমিতের বাড়া। সরাসরি গুতো মারে ম্যাগীর তলপেটে। এটাকে চাপমুক্ত করার জন্য ম্যাগী আরো উপরে উঠে আসে। ঘন দাড়ির উপর দিয়ে মূখটাকে দুই হাতে ফ্রেম করে। তারপর চুমু খায় লালচে মোলায়েম ঠোটে। অমিতের গুফগুলি ছোট করে ছাটা। ফলে চুমু খেতে গেলে ঠোটের উপর খোঁচা লাগে। এই সুড়সুড়ি অন্যরকম উত্তেজনা আনে শরীরে। ম্যাগী জ্বলতে শুরু করে। পুরুষ পার্টনার কম সক্রিয় এমন সংগম ম্যাগী ইতোপূর্বে আর কখনও করেনি। সে নিজে আস্তে আস্তে আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কুটুস করে কামড়ে দেয় অমিতের ঠোট। অমিত নিজের দুই ঠোটের মাঝে ম্যাগীর নীচের ঠোটটাকে চেপে ধরে চুষতে থাকে। হাত দুটি আস্তে আস্তে সক্রিয় হয় অমিতের। ম্যাগীর পিঠের উপর হাত নিয়ে ব্রার হুক খুলে দেয়। ছাড়া পেয়ে বুক দুটি টেনিস বলের মত বাউন্স করে। একটু লম্বাটে। গ্রীপ হয় চমrকার । অমিতের বিশাল থাবায় বুক দুটি নিষ্পেষিত হতে থাকে। ভাল লাগার আমেজটা সাই সাই করে চড়তে থাকে ম্যাগীর। একটু একটু ব্যথা বোধ হয়। কিন্তু সুখের তুলনায় সেটা কিছুই না। অমিত যদি থেমে যায় সে ভয়ে সে ব্যথাটা চেপে যায়। মাইয়ের উপর অমিতের হাতের চাপ আর ঠোটে তার চোষণ খেয়ে ম্যাগীর জল কাটতে শুরু করে। তার মূখ দিয়ে আহহহ্*, উমমমমমমমম্* ধরণের আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে আসতে থাকে। ম্যাগী নিজেকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয় অমিতের হাতে। ওয়ার্ম আপ শেষ হয়েছে। জাত খেলোয়াড় এবার নিজে থেকেই খেলা দেখাবে।

অমিত ঠোট ছেড়ে দিয়ে এবার ম্যাগীর একটা বোটা মূখে পুরে নেয়। দুই হাতে গোড়ার দিকে চেপে রেখে একবার এটা আরেকবার ওটার বোটা চুষতে থাকে পালা করে। একই সাথে মর্দন আর চোষণ খেয়ে ছটফট শুরু করে ম্যাগী। সে এত উত্তেজিত হয় যে, অমিতের গেঞ্জি খুলার চেষ্টা করে তর সইতে না পেরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে। উত্তেজিত হলে তার এরকমই হয়। সে ধীরে সুস্থে কিছু করতে পারে না। নীচে জাংগিয়ার দিকে হাত বাড়াতেই অমিত পাছা তুলা দিয়ে সেটাকে লুস করে দেয় যাতে ছিড়তে না হয়। ছাড়া পেয়ে অমিতের বাড়া মহারাজ ম্যাগীর দুই রানের মাঝখান দিয়ে আকাশের দিকে মাথা তুললো। রানের চিপায় জিনিসটার আকৃতি অনুভব করে শিহরণ খেলে গেল ম্যাগীর শরীরে। মাঝে মধ্যে যে সব লোকের সাথে সেক্স করেছে তাদের বেশীরভাগই ছেলে ছোকরা। দু একজন ছিল আবার বেশী বয়সী। এমন ম্যাচিউরড ইয়ংম্যান এই প্রথম তাকে চুদতে যাচ্ছে। ভাবতেই কেমন জানি লাগছে তার।

ম্যাগী রান দুটি একত্রে চেপে বার বার অমিতের বাড়ার সাইজ অনুভব করতে চাইছে। আর এমন মাইনকা চিপায় পড়ে অমিতের বাড়া যেন রাগে ফুসছে। তেড়ে ফুড়ে দুনিয়াটা একাকার করে দিতে চাইছে স্পেনিয়ার্ড ষাড়ের মত। ম্যাগীর পরনে এখনও প্যান্টিটা রয়েছে। ভিজে জবজবে হয়ে গেছে এটা। অমিতের চোষণ আর মর্দনে যোনীতে বান ডেকেছে ম্যাগীর। কান দুটি দপ দপ করে জ্বলছে। ইচ্ছে করছে আখাম্বা বাড়াটাকে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। কিন্তু ম্যাগী পাকা খেলোয়াড়। সে জানে মাছকে কিভাবে খেলিয়ে বড়শিতে গাথতে হয়। অমিতের খোলা বুকে নিপলস দুটোকে খামছে ধরে ম্যাগী। এটা পুরুষদের বেশ উত্তেজিত করে।

অমিত শোয়া থেকে ম্যাগীকে বুকে নিয়েই উঠে বসলো। তার পর কোলের উপর তুলে নিয়ে সটান দাড়ালো মেঝের উপর। পলকা শরীরটা মাথার উপর তুলে শূণ্যে পাক খাওয়ালো। ম্যাগীর মনে হলো সে যেন শিশু পার্কের চড়কিতে চড়ে পাক খাচ্ছে। একটুও বাঁধা দিল না। শুধু দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে উপভোগ করলো অমিতের আদর। ঘোরানো শেষ হলে অমিত ম্যাগীকে দাড়ঁ করালো মেঝের উপর। রসে ভেজা প্যান্টিটার দুপাশে আংগুল ঢুকিয়ে নিতম্ব থেকে নামিয়ে দিল। পা গলিয়ে বের করে নিল।প্যান্টিটা ছুড়ে ফেলে খানিকটা পিছিয়ে গেল অমিত। যেন শিকারের আগে শিকারী তার শিকার জরীপ করছে। সম্পূর্ণ নিরাভরণ হতেই দু’হাতে চোখ ঢাকলো ম্যাগী। হাজার হলেও পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে যে কোন মেয়ে লজ্জা পেতে বাধ্য। কাছে এসে আলতো করে চোখের উপর থেকে হাত দুটো সরিয়ে দিল। দুই হাতের তালু দিয়ে মূখটাকে দুপাশ থেকে ধরে সরাসরি তাকালো চোখের দিকে। আবেগ আর মায়াভরা চাহনী। ম্যাগীর বুক ভরে গেল সুখের আতিশয্যে। বছরের পর বছর ধরে এরকম আবেগময় আদরের অপেক্ষায় ছিল ম্যাগী। তার ঠোট দুটি তির তির করে কাঁপছে। অমিতের আগ্রাসী ঠোট নেমে এল ম্যাগীর কম্পমান ঠোটের উপর।

চুমোয় চুমোয় পাগল হয়ে যাবার দশা হলো ম্যাগীর। বুকটাকে এমন ভাবে দলাই মালাই করছে যে মনে হচ্ছে গোড়া থেকে না ছিড়ে যায়। শক্ত হাতের চাপে ব্যাথা ব্যাথা সুখ। দুই ঠোটের মাঝে নিপল নিয়ে মাথাটা বিদ্যুতের গতিতে এপাশ ওপাশ করতে থাকে অমিত। এমন আগ্রাসী সাকিং সহ্য করতে পারেনা ম্যাগী। উহ আহ চীrকার শুরু করে। অমিত থামে না। এক সময় সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে স্থির যায় ম্যাগী। তার জল খসে গেছে।

জোর করে অমিতের মূখটাকে বুক থেকে সরিয়ে দেয় ম্যাগী। তার কিছুটা বিরতি দরকার। সে দাড়ানো অবস্থাতেই কিছুক্ষণ অমিতের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয়। তার পর অমিতকে দাড় করিয়ে রেখে নিজে হাটু গেড়ে বসে তার সামনে। অমিতের ঠাটানো বাড়াটা একদম তার মূখের দিকে তাক করা। যেন কামান থেকে এখুনি গোলা ছুড়বে। উত্তেজিত বাড়াটাকে তার বিশাল মনে হয়। মাথার মুন্ডিটা এত সুন্দর যে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। ম্যাগী প্রথমে গোড়ায় হাত চেপে ধরে। তার পর মুন্ডিটায় চুমু খায় আলতো করে। চার পাশে জিব বুলিয়ে ভিজিয়ে নেয়। তার পর পুরো মুন্ডিটা মূখের ভিতর নিয়ে দুই ঠোট খাজেঁর মাঝে চেপে ধরে। চাপ অক্ষুণ্ণ রেখে জিবের ডগা দিয়ে মুনডির ছিদ্রটা চাটতে থাকে। অমিত গো গো আওয়াজ তুলে। নাকের ফুটো বড় হয়ে যায়। নিঃশ্বাস ভারী আর দ্রুত হয়। চাটতে চাটতে বাড়াটাকে যথা সম্ভব গলার ভিতর নেবার চেষ্টা করে ম্যাগী। পুরোটা পেরে উঠে না। অমিতের মুন্ডি সরাসরি গলার পিছনে ধাক্কা খায়। বেইসটা চেপে ধরে দ্রুত মূখ উঠানামা করে ম্যাগী। ওকে মূখচোদা করতে অমিতের ভীষণ ভাল লাগে। এক সময় ঘরময় উমউম উমআম, হুমহুম শব্দ উঠে। অমিতের ক্লাইমেক্স চরমে উঠে। সে ম্যাগীকে সাবধান করে। মূখ সরিয়ে নিতে বলে। কিন্তু ম্যাগী সরায় না। দুই হাতে অমিতের কোমরের নীচটা ঝাপটে ধরে সে অমিত যাতে পিছিয়ে যেতে না পারে।

সময় আসন্ন হয়ে এলে অমিতেরও আর করার কিছুই থাকে না। সে দুই হাতে ম্যাগীর মাথার পিছনটা চেপে ধরে । তার পর সেকেন্ডে একশবার গতিতে ঠাপাতে থাকে তার মূখের ভিতর। ঠোটের কষা, গলা ছিড়ে যাবার দশা হয় ম্যাগীর্ । সে এখন আর ঠোট দিয়ে চাপ দিচ্ছে না। শুধু ঠোটটা আটকে রেখেছে চার পাশে। সাকিং করতেও শক্তি ব্যয় করছে না। সব করছে অমিত। সে শুধু অমিতকে জড়িয়ে রেখেছে। এক সময় মনে হলো অমিতের পাছার দাবনা দুটো শক্ত হয়ে গেছে। বাড়াটা মনে হল লোহার পাইপের চেয়েও শক্ত। হঠাত স্থির হয়ে গেল অমিত। তার পর মাল ছেড়ে দিল। বলকে বলকে বীর্য বেরিয়ে এল। এত তীব্র অর্গাজম আর এত মাল ম্যাগী কখনও দেখেনি। সব চেটে পুটে খেয়ে নিল। তার পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো মেঝের উপর।

0 comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...